তবে কী এবার দগদগে ক্ষততে নুনের ছিটে দেবে আম জনতাকে টেলিভিশন।ফ্রি ডিশ’ পরিষেবা কী তবে বন্ধ হচ্ছে ? মাসিক কোনও খরচ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি ডিশ অ্যান্টেনা ও সেট টপ বক্স লাগিয়ে বেশ কিছু চ্যানেল দেখতে পারতেন দর্শক। এবার বক্সগুলিকে ‘অ্যাড্রেসেবল সিস্টেম’-এ আনা হোক দাবি করেন।
সংবাদ অনুক্ষণ, কলকাতা : টিভি দেখার খরচ বাড়তে চলেছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দাম বাড়ানোর পথে হাঁটছে এবং টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই যে নিয়ম সামনে এনেছে, তাতে আরও খানিকটা বাড়তি খরচের পড়তে হবে কেবল টিভি এবং ডিটিএইচ দর্শকদের।
দর্শক সাধারণত প্যাকেজেই চ্যানেল দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নতুন দাম হাঁকলে তার প্রভাব প্যাকেজেও পড়বে। মাল্টি সিস্টেম অপারেটর বা এমএসও সংস্থাগুলি কিন্তু বলছে, ইতিমধ্যেই বাড়তি দাম হাঁকা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তাই প্যাকেজের খরচ সার্বিকভাবে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ‘নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ফি’র ঊর্ধ্বসীমাও তুলে দিয়েছে ট্রাই। ফলে মনে করা হচ্ছে, এর জন্যও অতিরিক্ত খরচ মেটাতে হবে দর্শককে।
সব ধরনের মানুষ যাতে টিভিকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পেতে পারেন, তার জন্য ‘ডিডি-ফ্রি ডিশ’ পরিষেবা এনেছিল প্রসার ভারতী। এতে মাসিক কোনও খরচ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি ডিশ অ্যান্টেনা ও সেট টপ বক্স লাগিয়ে বেশ কিছু চ্যানেল দেখতে পারতেন দর্শক। সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে ট্রাই সুপারিশ করেছে, এই বক্সগুলিকে ‘অ্যাড্রেসেবল সিস্টেম’-এ আনা হোক। অর্থাৎ, কোথায় কত বক্স চালু আছে, তার যাবতীয় তথ্য রাখা হবে। সেক্ষেত্রে বক্সগুলি হবে ‘এনক্রিপ্টেড’। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বর্তমান বক্সগুলিতে সেই প্রযুক্তি নেই। আর তাই কেন্দ্র নয়া নিয়ম চালু করলেই নতুন করে সেট টপ বক্স কিনতে হবে গ্রাহককে। ফল? আরও একবার অতিরিক্ত খরচ।
সিটি কেবলের অন্যতম কর্তা সুরেশ শেঠিয়া বলেন, ‘চ্যানেলগুলি দাম বাড়ালেও আমরা চেষ্টা করছি, যতটা সম্ভব কম বোঝা যাতে দর্শকের ঘাড়ে পড়ে। পাশাপাশি আমাদের কিছু দাবিও মেনে নিতে চলেছে কেন্দ্র। অনেকগুলি পে-চ্যানেল দেখানো হয় ডিডি-ফ্রি ডিশে। অথচ সেই চ্যানেলগুলি যখন কেবল টিভি বা ডিটিএইচে দেখানো হয়, তার জন্য পয়সা গুনতে হয় দর্শকদের। এই বৈষম্য দূর করার দাবি ছিল আমাদের। তা মেনে নেওয়া হয়েছে। নয়া নিয়মে যদি দর্শকদের পয়সা গুনতেই হয়, তাহলে সব ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে। যদি বিনামূল্যে ডিডি-ফ্রি ডিশে চ্যানেল দেখানো হয়, তাহলে ডিটিএইচ এবং কেবল টিভির দর্শকও তা বিনা পয়সাতেই দেখবেন।’ সুরেশ শেঠিয়ার কথায়, ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন জনপ্রিয়। গোটা ইন্ডাস্ট্রি যদি সরকারের নিয়ম ও শর্ত মেনে চলতে পারে, তাহলে কেন তাদের নিয়মের বাইরে রাখা হবে?’
এমএসও সংস্থা হ্যাথওয়ের অন্যতম বর্ষীয়ান কেবল অপারেটর অলোক জানা বলেন, ‘কেবল টিভির দর্শক, অর্থাৎ সেট টপ বক্সের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। আমরা এমএসও সংস্থাগুলিকে বক্সের সংখ্যা অনুযায়ী টাকা মেটাচ্ছি। অথচ এমএসও এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বক্সের হিসেবে ডিল হচ্ছে না। মেটানো হচ্ছে থোক টাকা। চ্যানেলের দর নিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও এমএসওদের মধ্যে দর কষাকষিতে মীমাংসা না হলে, চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আচমকাই। তিতিবিরক্ত গ্রাহক আমাদের থেকে জবাবদিহি চাইছেন। অথচ আমরা নিরুপায়। এর দায় কে নেবে? আমরা জানি, টিভি দেখার দুনিয়ায় ডিজিটাইজেশন হয়েছিল দামে স্বচ্ছতা আনতে। এখন সেই দায় একমাত্র কেবল অপারেটরদের। বাকি ইন্ডাস্ট্রি চলছে পুরনো নিয়মে। এটা কাম্য নয়।’