পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বৃহস্পতিবার সকালে এই খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য।
সংবাদ অনুক্ষণ অনলাইন সংবাদদাতা ,কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। সকালেও বুদ্ধদেব প্রাতরাশ করেছিলেন। তার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তিনি প্রয়াত হন। খবর পেয়ে সুচেতন সেখানে পৌঁছেছেন।
সূত্রের খবর, বুধবার রাতে বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা রাতে সামাল দেওয়া হয়েছিল। তখনই ঠিক করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ উডল্যান্ডসের চিকিৎসকেরা এসে তাঁকে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। কারণ, হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টিতে তাঁর ঘোর অনীহা ছিল। তাই চিকিসকদের পরামর্শের কথা ভাবা হয়েছিল। সেই মতোই বিষয়টি এগোচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধদেব। সকালে উঠে প্রাতরাশের পর চা-ও খেয়েছিলেন। তার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নেবুলাইজ়ার দেওয়ার চেষ্টা হয়। সূত্রের খবর, সেই সময়েই তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয় দ্রুত। তাঁরা এসে বুদ্ধদেবকে প্রয়াত বলে ঘোষণা করেন।
বুদ্ধদেব মুখ্যমন্ত্রিত্বে তাঁর পূর্বসূরি জ্যোতি বসুর মতোই মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়া কোথায় এবং কী ভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। বুদ্ধদেবকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি নিয়েও তাঁরা আলোচনায় বসবেন। বুদ্ধদেব পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ফলে দিল্লির নেতাদেরও তাঁর শেষযাত্রায় একটা ভূমিকা থাকবে। আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার ফ্ল্যাটেই তাঁর মরদেহ রাখা হচ্ছে।
গত বছরের ৯ অগস্ট হাসপাতাল থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। ২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বেশ কয়েক দিন তাঁকে ভেন্টিলেশন (ইনভেনসিভ) সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকেরা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক রকমের সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালে প্রথম কয়েক দিন মূলত আচ্ছন্ন অবস্থাতেই ছিলেন বুদ্ধদেব। তবে ক্রমশ তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। ১২ দিনের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বাড়িতে ফিরিয়েও অবশ্য কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (সিওপিডি)-তে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। অসুস্থতার কারণে শেষ কয়েক বছর কার্যত গৃহবন্দিই ছিলেন। আগেও একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাঁকে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। সেই সময়েও কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় তাঁকে। সেখান থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।
২০২১-এর মে মাসের মাঝামাঝি কোভিডে আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ মে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। একই সময় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যও।একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়মীরাকে। দু’জনেই কোভিড নেগেটিভ হয়ে ফেরেন কিছু দিনের মধ্যে।
২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বুদ্ধদেব সংবাদের শিরোনামে আসেন পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করে। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর নাম মনোনীত করলেও, তিনি এই সম্মান নিতে অস্বীকার করেন।
বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর বাংলার রাজনীতিতে নানা দিক থেকেই এক সরগরম পর্ব। এই রাজনৈতিক উত্তাপের গোটাটাই ছিল তাঁর শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে।যে শিল্পায়নকে বুদ্ধদেব বাজি ধরেছিলেন, সেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিই বুদ্ধদেবের পায়ের তলার জমি সরিয়ে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছর পরই শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে অবসান হয় সাড়ে ৩৪ বছরের একটানা বাম শাসনের।