তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত যুবকের কোনও অনুতাপ বোধ নেই। ধৃত যুবক পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
সংবাদ অনুক্ষণ অনলাইন সংবাদদাতা : আরজি কর হাসপাতালে ঢুকে যুবতী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। তবে অপরাধের কথা স্বীকার করলেও এখনও তাঁর মধ্যে কোনও অপরাধবোধ দেখা যাচ্ছে না বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, কোনও অনুতাপবোধ নেই অভিযুক্তের মধ্যে। বরং অভিযুক্ত জেরার সময় বলেছেন, ‘‘ফাঁসি দিলে দিন।’’
আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত যুবক পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁকে শুক্রবার রাতে প্রথমে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে শনিবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল অভিযুক্তকে। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট তিনি ভিতরে ছিলেন। সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার কারণে হাসপাতালে ঢুকতে বা বেরোতে তাঁর সমস্যা হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ অভিযুক্ত এক বার হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। তার পর বেরিয়ে মদ খান। পরে মত্ত অবস্থায় ভোর ৪টে নাগাদ আবার হাসপাতালে ঢোকেন। প্রবেশের সময়ে তাঁর গলায় একটি ব্লুটুথ হেডফোন দেখা গিয়েছিল, বেরোনোর সময়ে যেটি ছিল না। পরে ওই হেডফোনেরই ছেঁড়া অংশ উদ্ধার হয় ঘটনাস্থল থেকে। এই হেডফোনের সূত্রে এবং সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
তদন্তকারীদের সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ধৃতের মোবাইল ফোনে রাখা ছিল পর্নোগ্রাফির বহু ভিডিয়ো। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ধৃত যুবকের মানসিক বিকৃতি রয়েছে। সেই দিকটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারির পরেও নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনও অনুতাপ প্রকাশ করেননি অভিযুক্ত। বরং এখনও তাঁর মেজাজ উদ্ধতই।
শুক্রবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে যুবতী ওই চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁর দু’চোখ থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল। হাত, আঙুল, পা, পেট-সহ দেহের নানা জায়গায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। অপরাধের আগে যুবতীর উপর নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তের পর মনে করছেন তদন্তকারীরা।
অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সর্বত্র উঠছে একটাই দাবি— ‘বিচার চাই’। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের এই ক্ষোভ সঙ্গত। তিনি তাঁদের সঙ্গে একমত। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা না-রাখতে পারলে যে কোনও এজেন্সিকে দিয়ে এর তদন্ত করাতে পারেন। তাতে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই। কারণ, সরকারের গোপন করার কিছু নেই। শনিবার ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।